Arpita Das : একঘেয়েমি দূর করে জনপ্রিয়তার শিখরে মা-মেয়ের ফোনালাপের 'ফুড রিলস'
নতুনত্বের ছোঁয়া দিতে বাংলা ইউটিউব কমিউনিটিতে নতুন নাম 'অর্পিতা দাস'
অতিক্রম নয়, বরং ব্যতিক্রমেই করতে হবে বাজিমাত। একঘেয়েমির ভিডিও আর নয়, বাংলা কনটেন্টে আসুক নতুনত্বের ছোঁয়া। দর্শকদের সেই নতুনত্বের ছোঁয়া দিতেই বাংলা ইউটিউব কমিউনিটিতে নতুন নাম 'অর্পিতা দাস' (Arpita Das)। জন্ম হাওড়ার পাঁচলায়, আর পাঁচটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছত্তছায়ায় তাঁর বেড়ে ওঠা। পড়াশোনার পাশাপাশি গান-নাচ-আবৃত্তি সবই শিখেছেন তিনি। আঁকার প্রতি ঝোঁক থেকে পরবর্তীতে পড়াশোনা করেছেন 'The Indian College Of Arts And Draftsmanship' থেকে।
২০১৯ সালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আমতলা নিবাসী সৌমিক মণ্ডলের সঙ্গে গাঁটছড়ায় আবদ্ধ হন অর্পিতা। পেশায় বিজ্ঞানী সৌমিক কর্মসূত্রে থাকেন সিঙ্গাপুরে। কাজেই, প্রবাসী বাঙালি বলতে পারেন দুজনকেই। তবে প্রবাসে থেকেও বাঙালির হেঁসেলকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি। কথা হচ্ছে আপনাদের প্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর অর্পিতা দাস (Arpita Das) এর বিষয়ে। মায়ের রেসিপিই যার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পরিদর্শকের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় সিঙ্গাপুর-নিবাসী অর্পিতা দাস।
অর্পিতা বরাবর রান্নার ভিডিও দেখতে ভালোবাসতেন। কখনও নিজে এই পথে এগোবেন, তা যদিও ভাবেননি। পরিদর্শককে তিনি জানান, ভিডিও এডিট করতে ভালোবাসতেন। আর এসবের মাঝেই অর্পিতার 'ভ্লগ' করার ইচ্ছেকে জাগিয়ে তোলেন বান্ধবী সায়নী দাস। তিনি নিজের একটি চ্যানেল খুলে ছোট ছোট রান্নার ভিডিও আপলোড করতেন। অর্পিতাকেও বলেন, নতুন নতুন পদ বানিয়ে যেন তিনিও আপলোড করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অর্পিতার কথায়, "আস্তে আস্তে আমিও শুরু করলাম, যদিও প্রথম দিকে ভিউস হত না। একবার দশটি দেশের অমলেট বানানোর ভিডিও আপলোড করি। ব্যস, সেটিই হয়ে ওঠে আমার 'টার্নিং পয়েন্ট'।"
পরবর্তীতে তাঁর 'ফিস ফ্রাই' এর ভিডিও পৌঁছে যায় প্রায় লাখ লাখ মানুষের কাছে। ৩.৪ মিলিয়ন ভিউস হয় সেই ভিডিওটির। এখানেই শেষ নয়, আপনারা সকলেই অবগত মায়ের সঙ্গে কথা বলার আঙ্গিকে ভিডিও বানায় অর্পিতা। যা এখন খুব ট্রেন্ডিং। এমনকি এই বিষয়টি কপিও করেছেন বহু ক্রিয়েটর।
পরিদর্শককে তিনি জানান, "একবার মায়ের হাতে মাটনের রেসিপির একটি ভিডিও বানাই, সে সময় ভয়েস ওভার দিতে অতটা সাবলীল ছিলাম না। ভাবনা আসে, মায়ের হাতের তৈরি রান্না যদি মাকে ফোন করেই জিজ্ঞেস করা যায়। তাই মায়ের সঙ্গে ফোনালাপটি ভয়েস ওভার হিসেবে জুড়ে দিই। এই ভিডিওতে প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষের ভালোবাসা পাই। তখন বুঝি যে মানুষ আমার ভিডিও পছন্দ করছে। মায়ের কাছ থেকে ফোনে রেসিপি জেনে, সেভাবেই রান্না করার ভাবনাটা আসলে সকলকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। অধিকাংশই নিজের সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছিলেন। আমার মা নিজেও বেশ উচ্ছ্বসিত হয়েছিল ভিডিও দেখে।"
অর্পিতা আরও বলেন, "আমার রান্না শেখা সিঙ্গাপুরে এসেই। প্রথমে মাকে ফোন করে রান্না জানতাম। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরে অমৃতাদি এবং শুভদা, খুব ভালো রান্না করে। সেখান থেকেও আমি প্রচুর রান্না শিখেছি।"
তবে মায়ের হাতে কী কী প্রিয় খাবার তাঁর? কলকাতা এলেও বা মেনুতে কী কী থাকে তাঁর? উচ্ছ্বসিত অর্পিতার উত্তর, "মায়ের হাতে রান্না বলতে আমার মাটন বা যেকোনও মাছ সব প্রিয়। মা নিরামিষাশী হলেও, রান্না সবই করেন। অন্যদিকে, শাশুড়ি মায়ের বানানো চচ্চড়ি খেতেও ভালোবাসি। কলকাতা এলে উচ্ছে ভাজা থেকে মাছের ঝোল সবই আনন্দ করে খাই। কলকাতার মোমো, বিরিয়ানি, চাউমিন, ফুচকা, ফিসফ্রাই এগুলোও ছেড়ে আসি না, যখনই যাই অবশ্যই খাই। আবার সিঙ্গাপুরে থাকলে প্রপার চাইনিজ ফুড খেতেও ভালোবাসি। ডাম্পলিন, নুডলস, এছাড়া থাই বা ওয়েস্টার্ন খেতেও খুব ভালো লাগে, যেমন পিজ্জা, বার্গার।"
পছন্দের ইউটিউবার কে? অর্পিতা পরিদর্শকের প্রশ্নে জানান, "বাংলায় 'Bong Eats' ভীষণ প্রিয়, এছাড়াও 'Your Food Lab' এবং 'Andy Cooks' এর ভিডিও আমার খুব ভালো লাগে।"
পুজোয় কী নিজের শহরে ফিরছেন অর্পিতা? প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, তাঁর হাওড়ার বাড়িতে (বেলকুলাই দাশবাড়ি) প্রতি বছর দুর্গা পুজোর আয়োজন করা হয়। তিনি আসেন। এবছর ৮৯ বছরে পা দিল অর্পিতা দাসের পৈতৃক ভিটের পুজো। নবমীর সন্ধ্যায় পুজোর গানে নৃত্য পরিবেশনও করেন অর্পিতা।
বলাবাহুল্য ভোজনরসিক বাঙালির প্রিয় নানান খাবারকেই নতুন আঙ্গিকে সোশ্যাল পরিবেশন করার দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। নেটিজেনদের থেকে আরও ভালোবাসা পেয়ে বেড়ে উঠুক অর্পিতা দাসের চ্যানেল। পরিদর্শকের তরফে রইল একরাশ শুভেচ্ছা।