KK-র প্রতি বাঙালির অতি উৎসাহ নিয়ে সোচ্চার হতে গিয়ে কটাক্ষের শিকার রূপঙ্কর বাগচী
বাঙালি কি দিন দিন বাংলা বৃত্ত থেকে সরে যাচ্ছে? অন্য সংস্কৃতির প্রতি ঝোঁক নিয়ে সরব হলেন গায়ক রূপঙ্কর বাগচী
সম্প্রতি কলকাতায় জনপ্রিয় বি টাউন, অর্থাৎ বলিউডের গায়ক কৃষ্ণকুমার কুন্নথ (Krishnakumar Kunnath) ওরফে কে.কে (K.K) অনুষ্ঠান করতে আসেন। আর তাঁকে ঘিরেই একটি বিতর্কিত আবহ তৈরি করে ফেলেন আমাদের জাতীয় পুরস্কারজয়ী গায়ক, রূপঙ্কর বাগচী (Rupankar Bagchi)। যেখানে তাঁর বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে, বাঙালি নিজের সংস্কৃতির তুলনায় অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে বেশি মাতোয়ারা। যেই উচ্ছাস কে.কের অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাঙালির মধ্যে দেখা গেছে, সেই উচ্ছাস বাঙালি গায়ক গায়িকাদের ঘিরে দেখতে পাওয়া যায় না।
কথায় বলে, মায়ের থেকে মাসীর দরদ নাকি বেশি! কিন্তু বাঙালির ক্ষেত্রে? বরাবরই দেখা যায় মাসীর প্রতি, তাকে বেশি দরদী হয়ে উঠতে। আপন সংস্কৃতি, ভাষা, উৎসব ছেড়ে বা কখনও সঙ্গে করেই, অপর সংস্কৃতি, ভাষা, উৎসবের প্রতি ঝোঁকার প্রবণতা বাঙালিদের মধ্যে বেশ সক্রিয়। সেই নিয়ে এবার ঘটে গেল সংস্কৃতি মহলে এক বিপত্তি। রূপঙ্কর সামাজিক মাধ্যমে (Social Media) একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে বাঙালির অতি এবং 'অহেতুক' উৎসাহকে নিয়ে তাঁর ক্ষোভ উদগীরণ হয়। সম্প্রতি কে.কের কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে আসা নিয়ে তৈরি হয় এই বিতর্কিত আবহ। রূপঙ্কর বাঙালি গায়ক গায়িকা, যথা অনুপম রায়, সোমলতা আচার্য, ইমন চক্রবর্তী, মনোময় ভট্টাচার্য, রুপম ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করে করে জানান, তাঁরা কেউ কে.কের তুলনায় কম নন। কিন্তু বাঙালিরা তাঁদেরকে নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ না করে, কেন অন্য সংস্কৃতির শিল্পীদের প্রতি এত অনুরক্ত হন? বাঙালি কি তবে বাঙালিয়ানা হারাচ্ছে? জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়কের অনুরোধ, পশ্চিমবঙ্গবাসী যেন বাঙালি হয়ে ওঠে। ওড়িশা, পাঞ্জাবের থেকে যেন বাঙালি শেখে, আপন সংস্কৃতির কদর।
'এ তুমি কেমন তুমি'র গায়ককে নিয়ে এই পোস্ট ঘিরে শুরু হয় কটাক্ষের তীব্র বর্ষণ। কেউ কেউ শিল্পীর মানসিক সুস্থতা কামনা করেন। কেউ বা চলতি বিভিন্ন ওয়েব সিরিজের টেমপ্লেট বানিয়ে, রূপঙ্করকে নিয়ে ট্রোল বানান। কেউ কেউ বাঙালির 'সস্তা সেন্টিমেন্ট' বলে দাগিয়েছেন রূপঙ্করের 'ক্ষোভ'কে। কেউ কেউ কটাক্ষ করে বলেছেন, 'রুপংকর,আপনারাই যখন সারেগামাপা তে হিন্দি গান নিয়ে মাতামাতি করেন, তখন বাংলা যায় কোথায়???? তখন বাংলা গানকে মর্যাদা দিন প্লিজ', কারুর মতে, 'যারা জে. কে.রাউলিং-কে ফলো করেন, তারা প্লিজ ওনাকে আনফলো করে আমাকে ফলো করুন। আমি বাঙালি, আর লিখিও ভালোই। আপনারা চাইলে 'হরি পত্তর' নামের একটা উপন্যাসও লিখে ফেলব। আপনারাই বলুন। কে, কেকে? আর কে, জেকে?' এক নেট নাগরিক রীতিমত বিরক্তি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, 'তেমন কিছুই না আপনার প্রতি যাদের যে শ্রদ্ধাটুকু আছে সেটুকুই হারাবেন। ভালো থাকুন সুস্থ হয়ে উঠুন।' কটাক্ষের তীব্রতা এতই সক্রিয়, যে কেউ আবার রূপঙ্করের ক্যাপশন নিয়েও তাঁকে বিদ্ধ করতে ছাড়েননি! একজনের বক্তব্য, 'আপনারা ভুল বুঝবেন না। দাদা ক্যাপশনেই বলে দিয়েছেন #বাংলা এফেক্ট'। জনপ্রিয় ইউটিউবার স্যান্ডি সাহা (Sandy Saha) রূপঙ্করের অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য কমেন্টবক্সে শেয়ার করে জানান, তিনিও রূপঙ্করের গান নিয়ে উত্তেজিত ছিলেন, কিন্তু অনুষ্ঠানে গিয়ে যখন শোনেন রূপঙ্কর 'মিও আমোরে' (Mio Amore) ব্র্যান্ডের প্রচারমূলক গানটি পরিবেশন করছেন, তখন সকল উত্তেজনা থিতু হয়ে যায়। প্রসঙ্গত গত বছর বড়দিনে 'মিও আমোরে'র থিম সংটি রূপঙ্করের কণ্ঠে শোনা যায়।
রূপঙ্করকে নেট দুনিয়া কোণঠাসা করতে থাকলে, তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর বক্তব্যকে ভুল ভাবে গ্রহন করা হচ্ছে। তিনি কে.কে কে অসম্মান করেননি। তিনি কেবল বাঙালিকে বলেছেন বাংলাকে কদর করতে। বাঙালি যদি তাঁর ভাবাবেগ, সহজে না ঠাহর করতে পারেন, তাহলে সেটি সত্যিই দুঃখের!