মির্জাপুর দ্বিতীয় সিজন: বদলার গল্প-বদলের গল্প
শুধু মোটর নার্ভ নয় সেনসরি নার্ভের দিকেও ঝোঁক এই সিজনে
কোনো শিল্পের রিভিউ করার সময় অন্য কোনো শিল্পের সাথে তুলনা করা চলে না। তবু মির্জাপুর দ্বিতীয় সিজন নিয়ে কথা বলার সময় প্রথম সিজনের কথা আসবেই বারবার। কারণ শিল্প দুটো স্বতন্ত্র নয়, একটা আরেকটার অংশ।
প্রথম সিজনের শেষে গুড্ডু(আলি ফজল) আর গোলুর(শ্বেতা ত্রিপাঠি) সামনেই বাবলু(ভিক্রান্ত মাসি) আর সুইটি(শ্রিয়া পিলগাঁওকর)-কে খুন করে মুন্না(দিব্যেন্দু শর্মা)। কোনরকমে বেঁচে যায় ওরা। সিজন দুই ওদের বদলা নেওয়ার গল্প। একইসাথে মুন্না বারবার তার বাবা অখন্ডা ত্রিপাঠীর(পঙ্কজ ত্রিপাঠী) কাছে অপমানিত হতে হতে ক্লান্ত। সে চায় ক্ষমতা। এটা তার অস্তিত্বের লড়াই। এই দুই শক্তির লক্ষ্য পূরণের প্রয়োজনে এসে পড়ছে আরও অনেকে। ভিন্ন মেরুতে থাকা অনেকগুলো মানুষের অস্তিত্বের লড়াই দ্বিতীয় সিজনে। লড়াই এতটাই প্রবল প্রথম সিজনের অহিংস গোলুও(শ্বেতা ত্রিপাঠি) তুলে নিয়েছে বন্দুক।
প্রথম সিজনে মোটা দাগের সেক্স আর ভায়োলেন্সের যে হিড়িক ছিলো সিজন দুই সেই রাস্তায় হাঁটেনি। অনেক ছোটো ছোটো ডিটেল অনেক টুকরো অ্যাকশন দিয়ে অনেকটা বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক থেকে অভিনেতা সকলেই। ফলতঃ সিজন এক দেখতে প্রতিনিয়ত মোটর নার্ভে যে চাপটা পড়েছিল সিজন দুই দেখার জন্য সেই চাপটা নেই। সিজন এক যদি একটা অন্ধকার বাস্তব দেখিয়ে থাকে তাহলে দ্বিতীয় সিজন সেই অন্ধকারে থাকা মানুষগুলোর মন খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
আসলে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা সকলেই নিজেদের বৃত্তে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার চেষ্টা করি। প্রতিদিন জীবনের ইঁদুর দৌড়ে থাকতে থাকতে এটাই আমাদের অভ্যেস হয়ে গেছে। আর মির্জাপুরের এই সিজন সেটাই দেখাচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে। সবাই চাইছে তার কথা বাকিরা শুনুক। মানুক। অথবা আপনার দখলে থাকুক বাকিরা। আর এই চাওয়াটা পূরণ না হলেই ভায়োলেন্সের পথ বেছে নিচ্ছে তারা। এটা কোনো 'মির্জাপুর'-এর গল্প? নাকি আমাদের প্রতিদিনের বাস্তব?
আর সত্যিই তো আমরা আমাদের পাশের মানুষগুলোর ভালো মেনে নিতে পারিনা মন থেকে। তাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত। মির্জাপুরে সেই ঘটনা প্রতি পদে পদে। কারও কাছ থেকে পাওয়া একটা অপমান আমরা মনে নিয়ে থেকে যাই বহুদিন। একটা বদলার আশায়। মির্জাপুর সিজন দুই সেই বদলার গল্প। আর বদলের গল্পও বটে। মানুষের ট্রান্সফরমেশনের গল্প। এ যেন এক সম্পর্কের সাপলুডো। আর মনের ক্লেদ গ্লানি হিংসা ভুলে নতুনের স্বপ্ন যে শুধুই ভালোবাসা দিয়ে দেখা যায় সেটাও দেখিয়েছে এই সিজন।