নারীদিবসের বিশেষ দিনে, হইচইয়ে মুক্তি পেল উদ্বাস্তু নারী 'ইন্দুবালা'র জীবনের ইতিহাস
দেশভাগের পটভূমিকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'
দেশভাগের পরবর্তী সময় উদ্বাস্তু জনজাতির হাহাকার, বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই ছেয়ে গেছিল এই দেশ জুড়ে। পূর্ববঙ্গের কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে দলে দলে মানুষ প্রাণ রক্ষার্থে ঠাঁই নিয়েছিলেন ভারতমাতার বুকে। পেটের দায়ে বেছে নিতে শুরু করেন নানারকমের পেশা। বাদ যাননি মহিলারাও। লেখক কল্লোল লাহিড়ী (Kallol Lahiri) সেরকমই এক বিষয়বস্তুর ওপর নির্মাণ করেছেন 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল' (Indubala Bhaater Hotel)। সম্প্রতি হইচই ওটিটি (Hoichoi Originals) মাধ্যমে ওয়েব সিরিজ আকারে মুক্তি পেয়েছে এই উপস্থাপনাটি। সিরিজটিতে, ইন্দুবালা নামের এক উদ্বাস্তু নারীর, দেশভাগ পরবর্তী জীবনের সংগ্রামের চিত্রণ ফুটে উঠেছে।
পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের (Debaloy Bhattyacharya) পরিচালনায়, 'ইন্দুবালা'র ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শুভশ্রী গাঙ্গুলি (Subhashree Ganguly)। যৌবন থেকে বার্ধক্য, বিভিন্ন পর্যায় তাঁকে এই সিরিজে দেখা গেছে। গল্পটি ওপার বাংলা থেকে জীবনের রক্ষার দায়ে এপার বাংলায় আসা এক উদ্বাস্তু নারীকে নিয়ে। তাঁকে অল্প বয়সে বৈধব্য গ্রাস করে। এই দেশে এসে, সংসারের হাল ধরতে তাঁর সম্বল হয় তাঁর রন্ধন কৌশল। খুলনায় ঠাকুমার থেকে শেখা রান্না দিয়ে, তিনি যেন এদেশের মানুষকে তাঁর ফেলে আসা জীবনের এক টুকরো অতীতের স্বাদ পাওয়াতে সামিল করেন। তাঁর হাতের স্বাদে ভরে ওঠে দেশভাগের যন্ত্রণা, স্বজনহারার বিচ্ছেদ। এদেশের মাটিতে নির্মিত হয় 'ইন্দুবালা ভাতের হোটেল'। 'চ্যাটচ্যাটে টেবিল আর স্যাঁতস্যাতে ঘর' হলেও, ওপার বাংলার স্বাদ পেতে এপার বাংলার মানুষের এই হোটেলই হয়ে ওঠে প্রাণকেন্দ্র।
সিরিজটি মুক্তি পেয়েছে, আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী নারী দিবসের দিন, অর্থাৎ ক্যালেন্ডারের হিসেব মত ৮ মার্চ। দেশভাগের পর, ইন্দুবালার মত অনেক নারীই সংসারের হাল ধরার জন্য হয়ে উঠেছিলেন সাবলম্বী। তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই ঔপন্যাসিক উপন্যাসটি রচনা করেন। ইতিমধ্যে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিরিজটি মন ছুঁয়ে গেছে দু দেশের মানুষেরই। এই প্রজন্মের অনেকেই তাঁদের আগের প্রজন্মের সঙ্গে মিল পেয়েছেন চিত্রনাট্যের গল্পে। স্বাভাবিকভাবেই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেছেন তাঁরা। অভিনেতা সুহোত্র মুখার্জীও (Suhotra Mukherjee) তাঁর স্মৃতি রোমন্থন করে জানিয়েছেন, এই সিরিজ তাঁকে তাঁর ঠাকুমার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। ঠাকুমার মুখে যে গল্প শুনেছিলেন, রুপালি পর্দায় তার চিত্রায়ন দেখে মুগ্ধ অভিনেতা। এমন এক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই উপস্থাপনার জন্য, প্রকাশ করেছেন সমগ্র কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও।