অভিনয় থেকে সমাজসেবা, সবেতেই একধাপ এগিয়ে 'বং ক্রাশ' ঋতাভরী
বাংলায় হোক আরও 'শবরী', চাইছে আপামর বাঙালী
ঠাকুমা-দিদিমাদের কথায় 'রূপে লক্ষী গুনে সরস্বতী' আর বর্তমান প্রজন্মের ভাষায় 'বং ক্রাশ', তবে যে ভাবেই আমরা তাঁকে চিনিনা কেন, সদা হাস্যময় তিনিই অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী। যিনি মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই একটি বাংলা ধারাবাহিকের প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বিনোদন জগতে আসেন। এই ধারাবাহিকের টিআরপি রেটিং এতোটাই বেশি ছিল যে,এখনও 'ললিতা' বলে সবাই ঋতাভরীকে এক নামে চেনে। তবে শুধু দক্ষ অভিনয় নয়, পড়াশোনাতেও রয়েছে তাঁর বহু খেতাব।
এরপর নিজের ব্যক্তিগত ও শারীরিক কিছু সমস্যার জন্য টেলিভিশন জগত থেকে কিছুটা বিরত থাকলেও পরবর্তীতে ঋতাভরী ২০১৭ সালে ফিরে আসেন নিজের প্রোডাকশনের গান 'ওরে মন' নিয়ে। যেখানে লীড রোলে ঋতাভরীর বিপরীতে ছিলেন বলিউড স্টার আয়ুষ্মান খুরানা। এর আগে ২০১১তে বড়ো পর্দায় পা রাখেন ঋতাভরী।
পড়াশোনা, অভিনয়, গানের কন্ঠ থেকে সিনেমা লেখার দক্ষতা সবেতেই সফল হয়েছেন ঋতাভরী। তবে এসবের পাশাপাশি ৭৪ জন শিশুর মা ঋতাভরী, এমনকি কয়েক হাজার মহিলার জীবনের লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন ঋতাভরী। মাত্র ১৬ বছর বয়স থেকে সল্টলেকের ‘আইডিয়াল স্কুল ফর দ্য ডেফ’ এই স্কুলের সঙ্গে যুক্ত ঋতাভরী। তাঁর মা শতরূপা সান্যাল এবং তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। এই স্কুলের সঙ্গে অভিনেত্রীর সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। এই স্কুলে যেসব শিশুরা আছেন, তাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁদের প্রত্যেকের যাবতীয় দায়িত্ব, সুখ-দুঃখের নানা মুহূর্তের সঙ্গী তিনি। তাঁদের জন্য লাইব্রেরির ব্যবস্থা হোক কিংবা বড়দিনে সান্তাক্লজ সেজে উপহার দেওয়া কিংবা তাদের পুজোর মজা সব আবদারই পূরণ করেন ঋতাভরী।
এর পাশাপাশি সমাজ সেবামূলক কাজ থেকেও থেমে নেই তিনি। করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষের সাহায্যে সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছেন তিনি। কয়েক মাস আগেই ১০০ জন প্রবীণ মানুষের কোভিড টিকার ব্যবস্থা করেন।
পাশাপাশি এবার করোনা যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ হেল্পলাইন চালু করার কথা জানিয়ে ঋতাভরী বলেছিলেন, "ভালোবাসা পেতে কার না ভালো লাগে? তোমরা আছো বলেই আমি আছি। আশীর্বাদ করো ,যাতে আরো অনেক ভালো ভালো কাজ করতে পারি আর মানুষের পাশে থাকতে পারি। আমি একটা হেল্পলাইন চালু করতে চলেছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে। যাঁরা এই অভূতপূর্ব কোভিড আক্রান্ত সময়ে নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে গিয়ে মানসিক ভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়েছন, তাঁরা সরাসরি সাইকিয়াট্রিস্ট বা মেন্টাল হেলথ বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলতে পারবেন। এই কঠিন সময়টা আমরা নিশ্চিত ভাবেই সাফল্যের সাথে পেরিয়ে যাব। সে জন্য দরকার সহানুভূতি আর একে অপরের হাত ধরে থাকা, ভালোবাসা নিয়ে! তোমাদের ললিতা ওরফে শবরী ওরফে ঋতাভরী।"
সেই মতোই গতকাল অতিমারীর এই কঠিন সময়ে রাগ, দুঃখ, হতাশা, একাকীত্বের মতো সমস্যায় যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী। শুরু করলেন ‘হিল উইথ মি’ প্রজেক্ট। এমন এক হেল্পলাইন নম্বর যেখানে বিনামূল্যে অভিজ্ঞ মনোবিদ এবং কাউন্সিলদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যাবে। ঋতাভরী লেখেন, "তোমাদের সব রকম মনোকষ্টে, হতাশায়, মনের জোর হারানো একাকীত্বের সুরাহা করতে চাই। কথা বলো মনোবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সাথে। কোন খরচ দিতে হবেনা। তার জন্য আমি আছি, আমার বন্ধু রাহুল দাশগুপ্ত আর 'সহায়তা' আছে। কল করো: 18002039865"
তবে শুধু কী তাই! ঋতুস্রাব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গতবছর ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি মুক্তির আগে কলকাতার বুকে মৌন মিছিল করেছিলেন ‘শবরী’ ঋতাভরী চক্রবর্তী। পরবর্তীতে কলকাতার সব শৌচাগারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বন্দোবস্ত করার অঙ্গীকার নিয়েছেন অভিনেত্রী।
আর সেই মতোই অভিনেত্রী স্বপ্ন দেখেন, কলকাতা প্রথম এমন শহর হবে, যেখানে প্রত্যেক সাধারণ শৌচাগারে থাকবে প্যাড ভেন্ডিং মেশিন। আর সেই স্বপ্নের পিছনে এখনও কাজ করে চলেছেন ঋতাভরী এবং কলকাতার প্যাডম্যান শোভন।