"বল ড্যান্স" এও প্রকাশ পেয়েছে কবি-প্রতিভা! চেনেন কি এই অচেনা রবীন্দ্রনাথকে?
আজ বাঙালির 'রবি-পুজো', জেনে নিন কবির জীবনের নানা অজানা কাহিনী
সূর্যের মতই তাঁর প্রকাশ ঘটেছে, তাঁর জন্মের শুভক্ষণে। ভাঙনের জয়গান গেয়ে, দিয়েছেন নূতনের ডাক। তিনি, বিশ্ববরেণ্য রবীন্দ্রনাথ। আজ, ২৫ শে বৈশাখ। তাঁর ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। জানেন কি, আপনার প্রাণের এই ঠাকুর, 'বল ড্যান্স', অভিনয়, এবং আরও নানাবিধ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার ছাপ প্রদর্শন করে গেছেন? এমন বেশ কিছু অজানা কাহিনী নিয়ে রইল, আজকের বিশেষ পর্ব।
লেখক, সুরকার, চিত্রশিল্পী, আরও যে কোন কোন বিশেষন দ্বারা তাঁকে চিহ্নিত করা যায়, তার ইয়ত্তা নেই! কিন্তু জানেন কি, রবি ঠাকুর নৃত্যেও ছিলেন পারদর্শী? আবার যেমন তেমন নৃত্য নয়, খুড়তুতো দিদি সত্যেন্দ্রবালা ঠাকুরের কাছে একেবারে "বল ড্যান্স" আয়ত্ত করে, রীতিমত অবাক করে দিয়েছিলেন তাঁর পারিপার্শ্বিক মহলকে। তিনি তাঁর নিজস্ব নৃত্যশৈলীকে, 'ভাবনৃত্য' নামাঙ্কন করেন। দেশ-বিদেশের নৃত্যভঙ্গি তাঁকে অনুপ্রাণিত করত। নাচকেই শুধুমাত্র প্রাধান্য দিতে গিয়ে, গান যেন তার স্বতন্ত্রতা না হারায়, সে বিষয়েও কবি সদা সচেতন থাকতেন। তাই তাঁর মন্ত্র ছিল, 'নাচের টেকনিক যেন গানের ভাবকে ছাড়িয়ে না যায়।'
এবার আসা যাক অভিনেতা রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গে। জানেন, একবার বা দুবার নয়, শতাধিক বার মঞ্চে অভিনেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি? প্রথম অভিনয়ে হাতে খড়ি হয়, ১৮৭৭ সালে। তখন তাঁর বয়স ষোলো বছর। দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা "এমন কর্ম আর করব না" নাটক দিয়ে মঞ্চে অভিষেক ঘটে অভিনেতা রবীন্দ্রনাথের। তারপর স্বরচিত "বাল্মীকি প্রতিভা" নাটকে, তিনি স্বয়ং বাল্মীকির চরিত্রে অভিনয় করেন।
প্রায় তিন হাজারের বেশি ছবি এঁকেছেন চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শান্তিনিকেতন তথা দেশের প্রদর্শনীই নয়, বিদেশেও তাঁর অঙ্কিত চিত্রের গুনে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন দর্শনার্থীরা। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর তত্ত্বাবধানে, প্যারিসের প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয় রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি।
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির অর্থ দিয়ে কী করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, শুনবেন সেই কাহিনী? কৃষকদের সুবিধার জন্য তিনি পতিসরে একটি ব্যাংক নির্মাণ করেন, নাম সেন 'পতিসর কৃষি ব্যাংক'। কৃষকরা যাতে স্বল্প সুদে ঋণ পান, সেই সুবিধাটুকুই প্রদান করা ছিল মানবদরদী কবির উদ্যেশ্য।
এবার সবচেয়ে বড় চমকপ্রদ কাহিনী ভাগ করে নেওয়ার পালা। আচ্ছা, বাঙালির হৃদয়ের এই দোসরটির পদবী কী বলুন তো? অনেকেই হয়ত প্রশ্নটি শুনে অবাক হবেন, কেউ বা বিনা সংকোচে বলে উঠবেন 'ঠাকুর'। কিন্তু না, এর পেছনেও রয়েছে কিছু আদিকথা। জোড়াসাঁকোর এই পরিবারটির আদি পদবী হল 'কুশারী'। তাঁরা ছিলেন শান্ডিল্য গোত্রের ব্রাহ্মণ। তাঁদের যুগে শ্রেণী বিভাজন প্রকট থাকায়, তথাকথিত নিচু শ্রেণীর হিন্দুরা ব্রাহ্মণদের 'ঠাকুর' নামে সম্বোধন করতেন। সেই থেকেই 'কুশারী' পদবী রূপান্তরিত হয়ে 'ঠাকুর' হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম প্রসঙ্গেও একটি উল্লেখযোগ্য কাহিনী আছে। একটি দুটি নয়, বরং অগণিত ছদ্মনামে তিনি তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন। ১৯২৪ সালের ৮ মে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর জন্মদিন পালন করেছিলেন চিন দেশে। জানেন, চিন দেশের সরকার কবিগুরুর জন্মদিনে, তাঁকে আস্ত একটি ছদ্মনাম উপহার দেন? 'চু চেন তাং' ছিল চিন দেশ থেকে প্রাপ্ত কবির ছদ্মনাম।