পরিবর্তনের ১০ বছরে মমতার সরকারের সাফল্যের খতিয়ান
গতকাল ছিল তৃণমূল সরকারের ১০ বছর পূর্তি
গতকাল মমতা সরকারের ১০ বছর পূর্ণ হল। ২০১১ সালের ১৩ মে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতন ঘটিয়ে বাংলার মসনদ দখল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানার শেষের দিকে যখন রাজ্য জুড়ে চলছে অপশাসন, হিংসার আগুনে জ্বলছে বাংলা, তখন বিপুল জনাদেশ মাথায় নিয়ে প্রথমবারের জন্য মা-মাটি-মানুষের সরকার তৈরি করেছিলেন জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের তলার মাটি শক্ত হয়। তখন বাংলার মসনদে বসা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষামাত্র। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে প্রথমবারের জন্য বাংলার মাটিতে শাসন করার জনাদেশ দিয়েছিলেন বাংলার মানুষ। ২০১১ সালের ১৩ মে তাই কলকাতার লালবাড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই লালবাড়ি যেখান থেকে একসময় তাঁকে 'চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে টেনে' বার করে দেওয়া হয়েছিল। এ যেন সময়ের সমাপতন! সেই লালবাড়িতে প্রথম পা দিয়ে তাঁর বজ্রনির্ঘোষ ধ্বনি বাংলার মানুষ শুনতে পেয়েছিল।
গতকাল ১৩ মে, ২০২১ ছিল মমতা সরকারের ১০ বছর পূর্তি। ২ মে মানুষের বিপুল জনাদেশে তৃতীয়বারের জন্য তিনি নির্বাচিত হয়ে নীলবাড়ি দখল করেছেন। তবে এবারের প্রতিপক্ষ লাল ছিল না, ছিল গেরুয়া। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২০০-র বেশি আসন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ে ২০১৯-র লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস যখন কার্যত পর্যুদস্ত, তখন কি এমন মমতার অবিচলিত শক্তি, নাকি গত ১০ বছরের অভাবনীয় সাফল্য তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠনে বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়তে হয়নি? নাকি গত ১০ বছরে বাংলার মানুষের সার্বিক উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের অভাবনীয় সাড়া এই ফলাফলে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে, তা আলোচনা সাপেক্ষ!
ক্ষমতায় এসেই মমতার সরকার সাধারণ মানুষের জীবন ধারার মানোন্নয়নে মনোনিবেশ করেছিলেন। রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, পানীয় জল ইত্যাদির পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এনেছিলেন বিপুল পরিবর্তন। মমতার গত ১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ানে মাস্টারস্ট্রোক 'স্বাস্থ্য সাথী' প্রকল্প, তাও আবার বাড়ির একজন মহিলার নামে। যে প্রকল্পের আওতায় সেই মহিলার বাপের বাড়ির এবং শ্বশুরবাড়ি সদস্য সরকারি সুবিধা পেতে পারেন। বাড়ির মহিলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন সুখী গৃহকোণের প্রথম শর্ত বাড়ির মহিলা।
দ্বিতীয়ত, কন্যাশ্রী ও সবুজসাথী প্রকল্প। এই প্রকল্প দু'টির আওতায় বাড়ির পড়ুয়া মেয়েদের প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো হয়। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বাড়ির মেয়েদের পুরুষদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয়। কিন্তু কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় ঘরের কন্যারা সম্মানের সঙ্গে পড়াশোনার সুযোগ পায়। তাই কন্যাশ্রী তো আজ বিশ্বশ্রী উপাধিতে ভূষিত। সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল দিয়ে পড়ুয়াদের বিদ্যালয় যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। ১৮ বছর বয়স হলেই বাড়ির মেয়েরা রূপশ্রী প্রকল্পের আওতায় এককালীন ২৫ হাজার টাকা পায়। তাই ১৮ বছরের আগে বাল্যবিবাহ অনেকটাই কমেছে রাজ্যে। কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যাও।
মমতা সরকার গত ১০ বছরে কৃষকদের বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কৃষকদের সাহায্য করতে চালু করেছেন 'কৃষক বন্ধু' প্রকল্প। তার পাশাপাশি মিউটেশন ছাড়সহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান সাফল্যের খতিয়ানে লিপিবদ্ধ। ভূমিহীন কৃষকদের পাট্টাপ্রদান কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঋণমুকুবের মতো কাজে মমতা সরকার মা অন্নপূর্ণার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। গ্রাম-শহরের সৌন্দর্যায়নে প্রশংসা কুড়িয়েছেন মমতা সরকার। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সমস্যা, পানীয় জল, নিকাশি ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত হয়েছে।
এই সরকারের জমানায় ভুলত্রুটি একেবারেই নেই বলা যায় না। বিরোধীরা বারবার সিন্ডিকেট, তোলাবাজির অভিযোগ তুলেছেন। তাছাড়া দিদির ভাইদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে 'কাটমানি' নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রেশন দুর্নীতি কিংবা আম্ফান দুর্নীতিতে বিরোধীরা সরব হলেও তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠনে বিন্দুমাত্র সমস্যায় পড়তে হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। গত ১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ানে তাই বিপুল জনাদেশ নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।