কাঁথিতে 'অধিকারী' গড়ের পতন, উত্থান 'গিরি' সাম্রাজ্যের
কাঁথির রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ, গদি হারাল কি অধিকারী পরিবার?
এভাবেও 'মিথ' বদলে ফেলা যায়? জয়ের অপ্রতিরোধ্য অশ্বমেধের ঘোড়াও থমকে দাঁড়ায়? হ্যাঁ, তাই হল। দীর্ঘ চার দশকের সাম্রাজ্যের পতন হল। ইতিহাসে বারবার তাই হয়েছে। সময় এলে ক্ষমতাচ্যূত হতে হয়।
হ্যাঁ, কথা হচ্ছে কাঁথি পুরসভা নিয়ে। 'অধিকারী' গড় বলে পরিচিত এই পুরসভার সমস্ত ক্ষমতাই কি এবার হারালেন অধিকারী পরিবার? অন্তত গতকালের পুরসভার ফলাফলের পর থেকেই কাঁথির আনাচে-কানাচে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। মানুষের অভিমত, বিদায়ের ঘন্টা আগেই বেজেছিল, গতকালের ফলাফল শেষ পেরেক পুঁতে দিল।
বাম জমানায় রাজ্যজুড়ে যখন সিপিএমের দাপট, তখনও কাঁথি পুরসভা বিরোধীদের দখলে। কী কংগ্রেস জমানা, কী সিপিএমের - কাঁথির শাসন ক্ষমতা অধিকারীদের হাতে। আর তৃণমূল জমানায় তো কথাই নেই, অধিকারীদের একচ্ছত্র শাসন। পুরভোট, বিধানসভা কী লোকসভা সবেতেই অধিকারীদের উত্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সাম্প্রতিক পুরভোটে স্বয়ং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখে শোনা গিয়েছিল, কাঁথি না জিতলে লড়াইটা কীভাবে সম্ভব? আর সেই কাঁথি পুরসভায় অধিকারীদের পতন জেলায় নতুন যুগের সূচনা হল বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।
কাঁথি পুরসভায় ২১ টি আসন। ১৭ টি এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে। ৩ টি বিজেপির, আর ১ টি গেছে নির্দলের হাতে। ফলাফল ঘোষণার পর কয়েক ঘন্টা কেটে গেছে। এখনও অধিকারীদের তরফে তেমন কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি। সময় বলবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কাঁথির রাজনীতির সমীকরণ কোন পথে এগোয়!
চলতি নির্বাচনে কাঁথির ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপির লড়াইয়ের চেয়ে বেশি মুখ্য হয়ে উঠেছিল তৃণমূল কংগ্রেস বনাম শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই। যদিও শেষ হাসি হাসিল করল সেই তৃণমূল কংগ্রেসই। এই লড়াইয়ে উঠে এল আর এক নতুন সাম্রাজ্যের কথা, 'গিরি' সাম্রাজ্য। কেন্দ্রবিন্দুতে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি এবং তাঁর পুত্র সুপ্রকাশ গিরির উত্থান। অধিকারী জমানায় তৃণমূল কংগ্রেসে কিছুটা 'ব্রাত্য' অখিল গিরিদের উত্থান পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করল বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক দলের একাংশ।
দিন বদল হয়েছে। অনেক ক্ষমতাই পেয়েছেন অখিল পুত্র সুপ্রকাশ গিরি। আর এই বিরাট সাফল্যে তাঁর মন্তব্য, "অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষ, আর অন্যায় আবদারের বিরুদ্ধে আদালত। যখন একজন এখনও মমতা ব্যানার্জীর দয়ায় তৃণমূলের কংগ্রেসের সাংসদ হয়ে বিজেপির প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা বলেন, তখন লজ্জা লাগে না, যে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের রক্ত ঘাম ঝরা পরিশ্রমের ফলে আপনি নির্বাচিত সাংসদ! তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে শুয়োরের বাচ্চা বলতে লজ্জা লাগে না? যে পৌরসভাকে এতদিন ব্যবহার করে লুটেপুটে খেয়েছেন, এত দুর্নীতি করেছেন, তখন লজ্জা লাগে না? গণতন্ত্র আবার নাকি এদের থেকে শিখতে হবে! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!!!" এখান থেকেই তো শুরু হল কাঁথিতে নতুন সাম্রাজ্যের, বলছেন এলাকার মানুষ।