বনধ রাজ্য সরকারের নীতিবিরুদ্ধ, আগামীকালের বনধ করতে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রাজ্য সরকার, সাফ ঘোষণা নবান্নের
কালকে বাংলা বনধ সফল হবে না, সরাসরি ঘোষণা নবান্নের
রাজ্য বিজেপি ডাকা সোমবারের বাংলা বনধের প্রেক্ষিতে নতুন ঘোষণা রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সরাসরি জানিয়ে দেওয়া হলো সোমবার বাংলায় কোন বনধ হবে না, স্কুল-কলেজ-দোকানপাট সমস্ত কিছু ঠিক ঠাক ভাবে চলবে। রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর নবান্ন জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে জোর জবরদস্তি করে বনধ করতে বাধ্য করা হলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রবিবার সন্ধ্যায় নবান্নের তরফ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বনধের কারণে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবন এবং জীবিকায় প্রভূত প্রভাব পড়ে। এই সংস্কৃতি রাজ্য সরকারের নীতি বিরুদ্ধ। তাই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রোজকার মতোই সরকারি বেসরকারি সংস্থা প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ দোকান বাজার সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলবে। কলকারখানা সব স্বাভাবিক নিয়মে চলবে এবং যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
রাজ্য সরকারি কর্মীরা যদি এই বনধের কারণে ছুটি নেন তাহলে তাদের বেতন কাটা যাবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও, রাজ্য সরকারের স্পষ্ট বার্তা বহন সফল করতে কোনভাবেই যাতে কোনো স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত না হয়, তার দিকে নজর রাখতে হবে পুলিশকে। নতুবা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি তরফে বনধের ঘোষণা হতে রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ জরুরি বৈঠক রেখেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরি কৃষ্ণ দ্বিবেদী। তিনি সমস্ত জেলা শাসক এবং পুলিশ কমিশনারেটগুলির কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করলেন। এই বৈঠকে বনধ রুখতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তাই নিয়ে কথা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রবিবার পুরভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে এই অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ১২ ঘন্টার বাংলা বনধ করার ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি বলে বিরোধীরা দিনভর নানা অভিযোগ তুলেছেন আজ। বিকালে ভোটগ্রহণপর্ব শেষ হতে না হতেই গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, শুধু বনধ ডাকাই নয় তা সফল করতে সর্বত্র বিজেপি কর্মীরা মাঠে নামবেন। বিজেপির অভিযোগ, রবিবার শাসকদল গায়ের জোরে ভোট করিয়েছে। বহু জায়গায় ভোট লুট হয়েছে এবং তা রক্ষা করার চেষ্টা না করে পুলিশ কোথাও নিরব দর্শকের মতো আচরণ করেছে আবার কোথাও তৃণমূলের পক্ষ নিয়েছে। এই অভিযোগে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, 'অবাধে ভোট লুট হবে কেউ ভাবেনি, আবারও নির্বাচন হওয়া উচিত।' অন্যদিকে ব্যারাকপুরে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বললেন, 'নির্বাচন কমিশনারকে গ্রেফতার করা উচিত। এই সরকারকে রেখে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়।' যদিও বিরোধীদের তোলাব অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে বক্তব্য, 'বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট আসেনি। রিপোর্ট আসলে তার পরেই বলা সম্ভব হবে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে কিনা।'
অন্যদিকে শুধু সরকারপক্ষ নয়, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও বিজেপির এই বনধের বিরোধিতা করা হয়েছে। তৃণমূল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, 'বিজেপির ডাকা এই বনধ আমরা বিরোধিতা করছি। আগামীকাল সবকিছু সচল থাকবে। সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে, এমন কিছু জিনিসকে আমরা সমর্থন করিনা। মানুষকে বিপদে ফেলে অর্থনীতি ধ্বংস করা, এই বনধের আমরা সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। যারা ভোটে কিছু করতে পারে না তারা এভাবে অশান্তি আর গোলমাল করতে বনধ ডাকে। রাজ্য প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে সচল থাকবে। যদি কেউ কথা বল বাল করতে আসে তাহলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে রাজ্য সরকার।' বিজেপির এই বনধের পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বললেন, 'বাংলায় কোন বনধের সংস্কৃতি নেই। বাংলায় কোন বনধ হবে না। বাস এবং ট্যাক্সিচালকেরা নির্দ্বিধায় রাস্তায় নামতে পারেন।' অন্যদিকে, বাম কংগ্রেসের তরফ থেকেও বিজেপির এই বনধের প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বললেন, 'বিজেপি একটা রাজনৈতিক দল। তারা বনধ ডাকতেই পারে। যে কারণে বনধ ডেকেছে, তাতে অযৌক্তিক কিছু দেখছি না।' অন্যদিকে, সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বলছেন, 'বিজেপির বাংলা বনধ রাখবে আর আমরা সমর্থন করবো এটা ভাবা ঠিক নয়। আমরা আন্দোলনের সঙ্গে থাকি। সারাদিন বিজেপি কোথায় ছিল? আজকে যেটা হলো সেটা খুবই খারাপ। নিন্দার কোন ভাষা নেই।'