বেলাগাম সৌগত! বিরোধীদের দিলেন জুতোপেটার নিদান, পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন কুনাল ঘোষের
বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে আবারো বিজেপির আক্রমণের মুখে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়
তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের (Sougata Roy) মুখে আরো একবার হুমকির সুর। এবারে একেবারে চামড়া গুটিয়ে পায়ের জুতো বানিয়ে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিলেন সৌগত রায়। শনিবার ডানলপ মোড়ের সভা থেকে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে একযোগে আক্রমণ করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য ছিল, যদি এই তিনটি দল নিজেদেরকে সংযত না করতে পারে, তাহলে তাদের জবাব দিতে এরকম ভাবেই আক্রমণ করবে তৃণমূল কংগ্রেস। স্বভাবতই উল্টো দিক থেকে এসেছে প্রতিবাদ। তৃণমূলের বক্তব্য, সৌগত রায় আসলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার কথা উচ্চারণ করেছেন। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, বিষয়টা যে এত তাড়াতাড়ি থেমে যাবে, এরকমটা কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না।
গত কয়েকদিনে একের পর এক সভা থেকে বিরোধীদলকে আক্রমণ করে চলেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। শনিবার বিজেপি নেতাদের নাম না করেই তিনি বলেন, 'আগে দিলীপ ঘোষ অশিক্ষিত ছিল। ক্লাস এইট পাশ, ফিডার মিস্ত্রি। আমি ভাবতাম ও যা ইচ্ছে বলুক। কিন্তু এখন দেখছি সুকান্ত মজুমদার, যিনি বটানির অধ্যাপক হয়েও সমান ভাবে উগ্র কথা বলছেন।' এরপরই তিনি হুমকি দেন, 'সিপিএম, বিজেপি আর কংগ্রেসের যদি কেউ থাকেন, তাদের আমি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছি, আমি এখানকার তিনবারের সাংসদ, এখানে দাঁড়িয়ে বলে যাচ্ছি, আপনারা যদি নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ না করেন তাহলে এরপর যদি আপনাদের কেউ জুতোপেটা করলে আপনারা দুঃখ করবেন না, আপত্তি করবেন না।'
দুর্নীতি নিয়েও মন্তব্য করলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর বক্তব্য, 'যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগ বা প্রমাণ এসেছে, যেমন পার্থর ক্ষেত্রে এসেছিল তার তৃণমূল কংগ্রেসে আর জায়গা হবে না। হতে পারে না, হবেও না।' জবাবে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, 'তৃণমূল কংগ্রেস যে কিভাবে একজন মার্জিত শিক্ষিত ব্যক্তিকে হার্মাদে রূপান্তরিত করতে পারে, তার উপযুক্ত উদাহরণ হলেন সৌগত রায়। তিনি জানেন, আগামীবার তিনি টিকিট পাবেন না। এই কারণেই নম্বর বাড়ানোর জন্য তিনি জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন। বয়স হয়েছে। তিনি অধ্যাপক মানুষ। তাঁর মুখে এরকম কথা মানায় না। না হলে জনগণ ওকে ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের জুতো দিয়ে জুতোপেটা করবে।'
যদিও এই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তিনি বলছেন, 'সৌগত রায় একজন বর্ষীয়ান নেতা এবং ভারতবর্ষের অন্যতম একজন শ্রেষ্ঠ সুবক্তা। উনি বারবার যেটা বোঝাতে চাইছেন সেটা হলো, একটা অত্যন্ত জঘন্য পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কোন বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি অপরাধ করে থাকলে আইন ব্যবস্থা নেবে। তার বদলে গোটা দলকে বা বাকি নেতাদের উদ্দেশ্য করে কোন রকম খারাপ মন্তব্য করা হবে কেন?' কুনাল ঘোষ আরো যোগ করলেন, 'শুভেন্দু অধিকারীর নামে তো সারদা এবং নারদা এফআইআর আছে। তাহলে গোটা বিজেপিটাকে দেখলেই চোর চোর বলা হবে? অমিত শাহ খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন একবার। তাহলে কি গোটা বিজেপিকে এবারে খুনি, খুনি বলা হবে?'
বিরোধীদের তোপ দেগে সৌগত বাবুর পাশে দাঁড়িয়েছেন কুনাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, 'ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবার প্রসঙ্গে সৌগত রায় এই সমস্ত মন্তব্য করেছেন। একদিন নেট ডাউন থাকলে তো পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীরা থাকবে না। বিরোধী মানে তো ফেসবুক আর টুইটারে বিবৃতি। তারা যদি এই ধরনের কুৎসা বা কুরুচিকর কাজ বাকিদের ক্ষেত্রে চালান, সেখানে সৌগত রায় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার কথা উল্লেখ এবং সকলকে সতর্ক করেছেন।' তিনি আরো বলেছেন, 'সিপিএমের সুশান্ত ঘোষ এর বিরুদ্ধে তো গণহত্যার অভিযোগ উঠেছিল, মিলেছিল কঙ্কাল। তাহলে কি মহম্মদ সেলিম এবং সুজন চক্রবর্তী যেখানেই যাবেন সেখানে ও সুজনদা কঙ্কাল কঙ্কাল বলবো? এটা তো বলা যায় না। সেটাই সৌগত রায় বলেছেন। বাড়াবাড়ি করলে যথাযথ জবাব পাওয়া যাবে।'