৬০ হাজার করে অনুদান পাবে পূজো কমিটি, বকেয়া ডিএ কবে? প্রশ্ন সরকারী কর্মীদের
তৃণমূল সমর্থিত সরকারি সংগঠনও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই করেছে
গত দুবছরের মতো অনুদান যে মিলবে তা জানত পূজো কমিটিগুলি, তবে তা যে আরও ১০ হাজার বাড়তে চলেছে তা ধারণা ছিল না তাদের। আজ, সোমবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে পূজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন ৫০ নয়, এবছর ৬০ হাজার টাকা করে মিলবে অনুদান। সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলেও দেওয়া হবে ৬০% ছাড়। এর জেরে মোট অনুদানের পরিমাণ ঠেকেছে ২৫৮ কোটিতে। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখেই যে এই সিদ্ধান্ত তা আর বুঝতে বাকি নেই কারো।
আজ বিকেলে পূজোর অনুদান ঘোষণা হতেই ফেটে পড়েন সরকারি কর্মী সংগঠনগুলি। ৩১ শতাংশ ডিএ যেখানে বকেয়া পড়ে আছে অর্থের অভাবে সেখানে এমন হরির লুটের মতো টাকা ছড়িয়ে মোচ্ছবের মানে কি? কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ প্রতিবাদ করে বলেন, "সরকার তো উৎসব, মোচ্ছব, ফূর্তি আর কার্নিভাল করেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত সরকারি কর্মচারী-বিরোধী সিদ্ধান্ত বলেই আমরা মনে করছি। আজ থেকেই আমরা বড়সড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
তৃণমূল সমর্থিত সরকারি সংগঠনও সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতাই করেছে। ইউনিয়নের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেন, "সরকারের প্রতিটি ইস্যুই সদর্থক। তবে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হিসেবে সরকারের সিদ্ধান্ত বোধগম্য হচ্ছে না যে, কেন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিককে সম্পূর্ণ ভাবে অনিচ্ছুকতায় মুড়ে দেওয়া হচ্ছে। যে সরকারি কর্মচারিদের হাত ধরে রাজ্যের উন্নয়ন হচ্ছে, তাঁদের বিষয়েও রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত।" অন্যদিকে বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের গলায়, "সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ নেই, রাজ্যে উন্নয়ন নেই। হাসপাতালে ওষুধ কেনার টাকা নেই। এই পরিস্থিতিতে ক্লাবকর্তারা এই অনুদান নিয়ে উদ্বাহু নৃত্য করলে বাড়ির লোকেরাই নিন্দা করবে। আর কোনও ক্লাব তৃণমূল সরকারকে জনরোষ থেকে রক্ষা করতে পারবে না।"
সরকারি কর্মীদের ডিএ না দিয়ে পূজোআচ্চা করায় টাকা ছড়ানোর বিরোধীতা করেছেন সিপিএম এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কর্মীরা ৩৪% হাতে ডিএ পান, অথচ রাজ্য সরকার পিছিয়ে রয়েছে ৩১%। কংগ্রেস নেতা সৌম আইচ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে সরব হয়ে বলেছেন, "রাজ্য সরকার দেনায় জর্জরিত। ৬ লক্ষ কোটি টাকা দেনা। আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারি কর্মচারীরা হাঁটু গেড়ে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি জানাচ্ছেন। অন্য দিকে রাজ্য থেকে পুঁজির পলায়ন ঘটছে। যুবক-যুবতীরা পরিযায়ী শ্রমিকের মতো রাজ্য ছাড়ছেন কর্মসংস্থানের অভাবে। খেলা-মেলা-উৎসবের বিরুদ্ধে আমরা নই। কিন্তু এটা কি বাহুল্য নয়? সাড়ে পাঁচ লক্ষ সরকারি পদ শূন্য। ব্যথর্তা ও দুর্নীতির যে কালো ছায়া পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ গ্রাস করছে, সেই সব দিক থেকে নজর ঘোরাতেই মুখ্যমন্ত্রী এ সব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে বাঁচতে চাইছেন।"