বাইক কেনার সামর্থ্য নেই, পায়ে হেঁটেই কলকাতা থেকে লাদাঘ জয়, সিঙ্গুরের মিলনের অসামান্য কীর্তি
পায়ে হেঁটেই মাত্র ৮৩ দিনে কলকাতা থেকে লাদাঘ পৌঁছে গেলেন মিলন, তৈরি করলেন নতুন ইতিহাস
দশরথ মাঁঝিকে (Dashrath Manjhi) সকলেই কমবেশি চেনেন, যিনি 'মাউন্টেইন ম্যান' নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিতি। কেবল একটি ছেনি ও হাতুড়ি নিয়ে ১১০ মিটার লম্বা, ৯.১ মিটার চওড়া এবং ৭.৬ মিটার গভীরতাযুক্ত পাহাড় কেটে পথ তৈরি করেছিলেন। তারফলে ৫৫ কিলোমিটারের দূরত্ব কমে দাঁড়িয়ে হয় মাত্র ১৫ কিলোমিটার। মানুষ এমন কত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। জেদ, দৃঢ় মানসিকতা দূরকে করেছে নিকট। এ এমনই এক অসাধ্যকে সাধ্য করে তোলার কাহিনি। সিঙ্গুরের ছেলে মিলন মাঝির (Milan Majhi) তেমনই এক রোমহর্ষক কাহিনি। পায়ে হেঁটে কলকাতা থেকে লাদাঘ যাত্রা।
পেশায় তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। রাণিগঞ্জের এক কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে কাজ চলে যায়। ফিরে এলেন নিজের গ্রামে। বাবার চায়ের দোকানে শুরু করলেন ব্যবসা। কিন্তু মন পড়ে আছে নতুন কিছু করার। স্বপ্ন তাঁর লাদাঘ যাত্রা। প্রথমে ইচ্ছে ছিল বাইকে করে লাদাঘ যাত্রা। কিন্তু বাবা অনিল মাঝি সামান্য চায়ের দোকানদার। তাঁর পক্ষে এত টাকা দিয়ে ছেলেকে বাইক কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই। নিজেরও এতটা আর্থিক সঙ্গতি নেই যে একটা বাইক কেনে। অগত্যা পায়ে হেঁটে লাদাঘ যাত্রার সিদ্ধান্ত।
ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখ হাওড়া স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু। আর ১৫ মে অর্থাৎ মাত্র ৮৩ দিনের মাথায় পায়ে হেঁটে লাদাঘ পৌঁছে গেলেন মিলন। মনে সাহস এবং অদম্য জেদ নিয়ে অসাধ্যকে বাস্তবে পরিণত করলেন তিনি। প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছে গেলেন মিলন। ১৮,৩৮০ ফুট উচ্চতায় যখন ভারতের জাতীয় পতাকা পুঁতে দিলেন, তখন তাঁর চোখে জল। ভেবেছিলেন বাইক নিয়ে যাত্রা করবেন, বাইক নেই তো কী হয়েছে পায়ে হেঁটেই তো যাত্রা করা যায়। মানুষ চাইলে কী না পারে!
বাবা অনিল মাঝি জানতেনই না ছেলে কী করতে চলেছে। যখন তিনি জানতে পারলেন ছেলের এই অসাধ্য সাধনের কথা গর্বে তাঁর বুকটাও চওড়া হয়ে উঠল। আর মা কান্নাভেজা চোখে বলে গেলেন, বাইক কিনে দিতে পারিনি তো কী হয়েছে? আমার ছেলে দেখিয়ে দিল সে পারে! মিলনের এই অদ্ভুত উদ্যোগের কথাটি যখন জানাজানি হয়, সকলেই তখন ব্যঙ্গ করেছিলেন। এ-ও কি সম্ভব নাকি? পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়? হ্যাঁ, যাওয়া যায়। মানুষ মন থেকে কিছু চাইলে না হয়ে কী পারে!