রাত পোহালেই শুরু গণনা, ছোট লাল বাড়ির যুদ্ধে বিরোধীরা ১০ আসনের আশায়
শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে এবারের পুরসভা নির্বাচনে তারা অন্তত ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করেছেই
রাত পোহালেই কলকাতা পুরভোটের ফল ঘোষণা। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিচ্ছে সেটা নিয়ে আর কোন সংশয় নেই। শুধুমাত্র এখন শাসক দলে চিন্তা কটি আসনে জয়লাভ করবে সেটা নিয়ে। কলকাতা পৌরসভা ভোটে গতবারে তৃণমূল কংগ্রেস ১১৪ আসনে জয়লাভ করেছিল। এবং বিরোধীরা জিতেছিল ৩০ টি আসনে। কিন্তু এবারে শাসক দল দাবি করেছে তারা জয়লাভ করবে ১৩৪ টি আসনে। সেখানেই, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ১০ টির বেশি আসন লাভ করবেন বলে দাবি রেখেছেন। বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস নেতারা একযোগে স্বীকার করে নিয়েছেন, শাসক দল এবারের নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে জয়লাভ করবে। কিন্তু, বিরোধীরা দুই অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছতে পারলে, সেটাই তাদের কাছে হয়ে উঠবে অনেক বড় কথা।
২০১৫ সালের পুরসভা ভোটে বামফ্রন্ট জয়লাভ করেছিল ১৫টি আসনে, বিজেপি জয়লাভ করেছিল ৭টি আসনে, কংগ্রেস জয়লাভ করেছিল ৫টি আসনে আর বাকি আসন পেয়েছিল অন্যান্যরা। সেখানেই, বুথ ফেরত সমীক্ষা থেকে এবারে আশা, কংগ্রেস জয়লাভ করবে ১টি আসনে, এবং বিজেপি জয়লাভ করবে ১০টি আসনে, অর্থাৎ বিরোধী শিবির জয়লাভ করবে ১১টি আসনে এবং তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে ১৩৩টি আসন। যদিও সমীক্ষা অনুযায়ী ভোট পার্সেন্টেজ ভিত্তিতে তৃণমূল কংগ্রেস ৫৮ শতাংশ ভোট পেতে চলেছে। বিজেপি পেতে চলেছে ২৮ শতাংশ ভোট, বামেরা পাচ্ছে ৫ শতাংশ এবং কংগ্রেস পাচ্ছে ৭ শতাংশ ভোট। যদিও নির্দল এবং অন্যরা বাকি দুই শতাংশ ভোট পেতে পারে বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়।
যদিও এবারের নির্বাচনে প্রার্থী এবং এজেন্টের ধরে মারধর থেকে শুরু করে বোমাবাজি, বুথ দখল এবং ছাপ্পা ভোট সবকিছুই হয়েছে দেদার। প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু, কলকাতায় নির্বাচনী গোলমাল এর আগে যেরকম ঘটেছে তার থেকে রবিবারের গোলমাল খুব একটা বড় কিছু নয়। কিন্তু দিনভর এই উত্তেজনার পরিস্থিতি থাকলেও শাসক শিবির দাবি জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এবারের কলকাতা পুরভোট অন্যান্য ভোটের থেকেও একেবারে আলাদা রকমের। কলকাতা পৌর এলাকার বাইরে অর্থাৎ বিধাননগরের রাজ্যের বিরোধী দলনেতার বাড়ি পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, এমএলএ হস্টেলের গেট তালা বন্ধ করে দিয়ে বিধায়কদের নিয়ন্ত্রণ করার ঘটনা ঘটেছে এবারের পুরভোটে।
রাজ্য প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে, ভোটের দিন উত্তেজনা এড়ানোর জন্য শুধুমাত্র এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে বিরোধীদের দাবি, ভোটের দিন ভোট কারচুপি করার জন্যই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তারা। রবিবারে ভোট লুন্ঠনের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কিছু জায়গায়। তার প্রতিবাদে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু করা হয়েছিল বিজেপির তরফ থেকে। শুভেন্দু এবং বিজেপি বিধায়ক এর গতি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগও উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেখানেও শাসক শিবিরের কাছে একটা হাতিয়ার রয়েছেই। ভোটের আগে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। সে নির্দেশিকায় লেখা ছিল, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ভোটের দিন ঘোরাফেরা করতে পারবেন না, কেবলমাত্র যারা প্রার্থী তাদের ক্ষেত্রে নিজেদের ওয়ার্ডে ঘোরাফেরা করা যাবে। তাই ছোট লাল বাড়ি দখলের যুদ্ধে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ যে খুব একটা ধোপে টিকবে না সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।