পরিকাঠামো ও পরিকল্পনার অভাবে 'জলে গেল' ট্যাব কেনার ৯৫ কোটি টাকা
চলতি বছরের শুরুতে প্রায় সাড়ে ন লক্ষ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের এই ট্যাব কেনার টাকা দিয়েছিল সরকার
অনলাইনে (Online) পাঠদানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার প্রায় ৯৫ কোটি টাকা খরচ করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ট্যাব (Tab) কিনে দিয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ন লক্ষ পরীক্ষার্থীর প্রতি অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল ১০ হাজার টাকা। এ বাবদ সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ৯৫ কোটি টাকা, অথচ সেই টাকায় কোন অনলাইন ক্লাসই হয়নি বলে দাবি। একদিকে কোন ক্লাস হল না, আর অপরদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় এই টাকা কার্যত নষ্ট হল বলছেন শিক্ষকদের একাংশ।
চলতি বছরের শুরুতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাসের উদ্দেশ্য নিয়ে রাজ্য সরকার ট্যাব দেওয়ার ঘোষণা করে। সেই মোতাবেক জানুয়ারির মাঝামাঝিতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায় ১০ হাজার টাকা। ট্যাব কেনা হল কিনা তার জন্য রসিদ জমা করতেও হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ট্যাব কেনা হলেও কোন অনলাইনে ক্লাস হয়নি দাবি একাংশের।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে পরিকল্পনার অভাব ছিল মনে করছেন একাংশ। তাঁদের দাবি, অনলাইনে ক্লাসের উদ্দেশ্য নিয়ে ট্যাব কেনা হলেও অনলাইনে যে ক্লাস নিতে হবে তার কোন সরকারি বিজ্ঞপ্তি দেয়নি সরকার। কয়েকটি স্কুল নিজ উদ্যোগে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছিল। তা ছিল নামমাত্র। অধিকাংশ স্কুলে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কোন উদ্যোগই শুরু হয়নি। অবশ্য আর এক শ্রেণির মতে, জানুয়ারিতে ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া হয়, অথচ কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে স্কুলে অফলাইন ক্লাস শুরু হয়ে যায়। তখন ট্যাবের কোন কার্যকারিতা ছিল না। কিন্তু সরকার চাইলে অনলাইনে ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট গুলোও নিতে পারত। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় সরকারের এই পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্তে টাকা গুলো কার্যত জলে গেল বলছেন ওয়াকিবহাল মহল।
সমাজের একটা বড় অংশের মানুষের বক্তব্য, এই টাকায় কেনা ট্যাব গুলি এখন শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন গেম খেলার প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে। একদিকে ক্লাস নেই, আবার পরীক্ষাও নেই, তাই শিক্ষার্থীদের একাংশ অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগররের এক অভিভাবক তপন মিশ্র মনে করেন, "এখন কাজে না লাগলেও ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষায় এই ট্যাব গুলি কাজে লাগবে।" এক বেসরকারি স্কুল শিক্ষক সমরেশ মণ্ডল মনে করেন, "সরকারের কথা অনুযায়ী সকল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কাছে ছিল এই ট্যাব। তাহলে অনলাইনে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নভিত্তিক পরীক্ষা কি নেওয়া যেত না?" তবে কোভিড পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী শিক্ষাবর্ষেও ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনা কম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের ট্যাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ধারা বজায় থাকলে আগামী শিক্ষাবর্ষে এই ট্যাব গুলি অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় কাজে লাগবে মনে করছেন একাংশ। যদিও সরকারের সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন শিক্ষকদের একাংশ।