কপালে তিলক কেটে, পান চিবোতে চিবোতে বাংলার সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে : বিষ্ণুপুরের সভা থেকে বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা
ক্ষমতায় ফিরলে দ্বিগুণ পরিমাণে শিক্ষক ও চিকিৎসক নিয়োগ হবে : প্রতিশ্রুতি মমতার
আজ বিধানসভা কেন্দ্র বিষ্ণুপুর, ওন্দা এবং বাঁকুড়ায় জনসভার কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনুমান, বিষ্ণুপুর সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের জবাব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজেই সমস্ত নজর আজ মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে। এদিন জনসভার শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী স্লোগান দেন, ‘খেলা হবে, বিজেপি খালি হবে’। সাথেই ভোট মেশিন পাহারা দেওয়ারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সপ্তম পে কমিশনের কথা তুলে বিজেপিকে বিঁধলেন মমতা। বলেন, "বিজেপি বলছে সপ্তম পে কমিশন হবে। অথচ সব বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে, সব বিক্রি করে দিচ্ছে। বিজেপি দুর্যোধন, দুঃশাসনের দল, সিপিএম বিজেপিকে নিয়ে এসেছে। আমাদের দু-একটা গদ্দার বিজেপিতে গেছে। যাও চলে যাও, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল। ২৯১ আসনেই আমাকে ভোট দিন।"
বহিরাগত প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "বাংলায় ভিন রাজ্য থেকে যারা আসে তাঁদের বহিরাগত বলি না। যারা শুধু ভোটের আগে আসে, তাদের বহিরাগত বলি। বহিরাগত গুন্ডা কাদের বলি? উত্তরপ্রদেশের গুন্ডাদের সাজিয়ে পাঠাচ্ছে। কপালে তিলক কেটে, পান চিবোতে চিবোতে বাংলার সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। বহিরাগত গুণ্ডা কারা? উত্তরপ্রদেশের পুলিশ আজ চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে বিজেপির অত্যাচারে। কত মেয়েকে পুড়িয়ে দিয়েছে। বাবা-মাকে অত্যাচার করতে গেছে। বাঁকুড়ায় এসে পাঁচতারা হোটেল থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসে বলছে তফশিলিদের বন্ধু। তফসিলি, আদিবাসী, সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করো তোমরা।"
এরপরেই বিষ্ণুপুরের জনগনের উদ্দেশ্য মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "সংস্কৃতিই আসলে সোনার খনি। বিষ্ণুপুরের সমস্ত প্রাচীন পুঁথি ডিজিটাইজ করা হবে। তাহলে সোনার খনি ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।"
এরপরেই জনগনের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বীরসা মুণ্ডার ছবি বলে কার ছবিতে মালা দিয়েছিল? মনে আছে? বিষ্ণুপুর কি ভুলে গিয়েছে?"
এরপরেই বিষ্ণুপুরের জনসভায় একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর। বললেন, "বিষ্ণুপুরে হেরিটেজ টাউন হবে, আগেও বিষ্ণুপুরের ঘোড়া ও পট শিল্পীদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উন্নতি হবে। আমি যা বলি করে দেখাই। বালুচরি শাড়ি আগে কাগজের মতো ছিল, আমি ওই শাড়ি আরও নরম করার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্বের বাজারে আরও কদর বেড়েছে বালুচরির। ১০০ দিনের কাজ ২০০ দিনের কাজ হবে, জঙ্গলমহলে ৪০ হাজার ছেলেমেয়েকে চাকরি করে দিয়েছি। যাতে তাঁরা মূলস্রোতে ফিরে আসেন। এসেছেনও। যা বলেছি তা করে দেখিয়েছি।"
প্রতিশ্রুতি দিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মত, ২৯১ টা সিটে আমাকেই ভোট দেবেন। টাকা দিলে নেবেন কি নেবেন না আপনার ব্যাপার। ওটা আপনার টাকা। তবে টাকা নিলেও ভোট দেবেন না। ওরা বলতে পারে, ‘কোথায় ভোট দিচ্ছিস, দেখতে পাব’। মিথ্যে কথা। কিচ্ছু দেখতে পাবে না। তাই যদি বলে খরচ দিচ্ছি। ওদের খরচ করে দেবেন। ফুল একটাই। মাটি মানে ঘাস। ঘাস মানে জোড়াফুল। আর সেই জোড়াফুলেই ভোটটা দেবেন। তবেই তো আপনাদের বিনামূল্যে চাল দিতে পারব। সুবিধা দিতে পারব। আমাকে চাইলে জোড়া ফুলে ভোট দিন।"
এখানেই শেষ নয়, "কৃষকদের এক একর জমি প্রতি টাকা দিই। ১৮ বছর বয়স থেকে এবার সব বিধবাদের ভাতা দেওয়া হবে। শিক্ষক, চিকিৎসক দ্বিগুণ করে দেব। ক্ষমতায় এলে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৫ লক্ষ চাকরি দেবে সরকার" - এমনই বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির ইস্তাহারকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত, "মমতাকে গালি দিয়ে লাভ নেই। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, বিনা পয়সায় রেশন আমাদের সরকার করেছে। ভোট না দিলে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী বন্ধ হয়ে যাবে। ভোট দিলে বিনা পয়সায় খাদ্য দেব, দুয়ারে রেশন দেব। পড়ুয়াদের জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হবে। ধার নিয়ে পড়াশোনা করবে, পরে অল্প সুদে টাকা শোধ করবে।"