নাচের প্রলোভনে ভিন্ রাজ্যে নারী পাচারের ছক, সুন্দরবন উপকূল থানার তৎপরতায় গ্রেফতার ৪
নারী পাচারের শিরোনামে বারবার সুন্দরবনের নাম, বাড়ছে আশঙ্কা
পশ্চিমবঙ্গে নারী পাচারের কথা উঠলে সুন্দরবনের (Sundarban) উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকার নাম সবার আগে শিরোনামে উঠে আসে। কখনও ভিন্ রাজ্যে কাজের সুযোগের অছিলায়, আবার কখনও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অন্যান্য রাজ্যে এমনকী দেশের বাইরেও নারী পাচারের (Women Trafficking) খবর মাঝে মাঝেই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে। অভাবের তাড়নায় এই প্রান্তিক মানুষদের একাংশ কখনও বাধ্য হয়ে আবার কখনও প্রলোভনে পড়ে এই পথ বেছে নেয়। সরকার এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৎপরতায় বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এদের বেশিরভাগই অন্ধকার দুনিয়ায় হারিয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার একটি ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সূত্রের খবর, সংসারের চরম অভাব-অনটনের সুযোগ নিয়ে একদল লোক সুন্দরবনের বেশকিছু অঞ্চলের মেয়ে বউদের ভিন্ রাজ্যে পাচার করে দিচ্ছে। তবে এবারে বিহার-সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নাচের সুযোগ করে দেওয়ার টোপ দিয়ে নারী পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে তিন যুবক এবং একজন মহিলাকে গ্রেফতার করেছে সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ। এই গুরুতর অভিযোগ পেয়ে সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ আমতলি এলাকায় হানা দিয়ে বিহারের সিওয়ান জেলার বাসিন্দা রাকেশ তিওয়ারি ও তার স্ত্রী রত্না সর্দার, পবন গুপ্ত এবং অরিজিৎ মাজিকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হবে।
সুন্দরবন লাগোয়া মোল্লাখালি, আমতলি, কুমিরমারী প্রভৃতি দ্বীপে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন নাচের দল। স্থানীয় ভাষায় যাদেরকে 'ডান্স হাঙ্গামা' দল বলা হয়। এরা এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচের প্রোগ্রাম করে থাকে। সূত্রের খবর, তাদের মধ্যে কিছু মানুষ বেশি টাকার লোভে বিহার-সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকায় নাচের প্রোগ্রাম করতে যায়। বেশি টাকার লোভে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইসব জায়গায় চলে অশ্লীল চটুল নৃত্য, যা সূত্র মারফত খবর। বুধবার তেমনই সুন্দরবনের আমতলি থেকে অভিযোগ আসে সুন্দরবন উপকূল থানার কাছে। জানা যায়, মোল্লাখালি এলাকার একজন অভিযোগ দায়ের করেছেন যে বিহারে নাচতে গিয়ে তাঁর স্ত্রী বুঝতে পেরেছেন নাচের নামে ভয়াবহ দৃশ্যের কথা। অভিযোগ পেয়েই সুন্দরবন উপকূল থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সূত্র মারফত জানা গেছে, সেই মহিলা কোনভাবেই বিহার থেকে পালিয়ে আসেন। আর বাড়ি এসে তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বাড়ির লোকেদের জানান। এখানেই শেষ এই মহিলার খোঁজে বিহার থেকে কিছুজন আসে। তাঁকে ফের বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে বিহারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এতেই সেই মহিলার স্বামীর সন্দেহ হয়। তিনি সুন্দরবন উপকূল থানার কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ সেই বিহারের বাসিন্দাদের আটক করেছে বলে খবর।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় মণ্ডল জানাচ্ছেন, এলাকায় দিন দিন এই 'ডান্স হাঙ্গামা' দলের প্রকোপ বেড়েছে। আগে স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেইসব দল প্রোগ্রাম করত। কিন্তু গত বছর দেড়েক করোনার সময়ে এ রাজ্যে লকডাউন থাকায় এইসব দল পুরো কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে বেশি টাকার লোভে বিহার-সহ উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এইসব দল গোপনে প্রোগ্রাম শুরু করে। কিন্তু এসবের মধ্যে যে এতবড় চক্রের জাল ছড়িয়ে আছে, তা জানা ছিল না। প্রশাসনের শীঘ্রই এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা উচিত।